নেদারল্যান্ড ম্যাচের আগে স্মৃতিতে অম্লান তামিম ইকবাল

প্রথম প্রকাশঃ অক্টোবর ২৪, ২০২২ সময়ঃ ১২:১১ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:১১ পূর্বাহ্ণ

সংগ্রহ 

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ওপেনার তিনি। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি- তিন ফরম্যাটেই তার ব্যাটে রানের নহর বয়ে যায়। বাহারি শটের ফলগুধারা বয়। দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি আর বিশাল ছক্কায় মাঠ গরম করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ বোলিংকে দুমড়ে মুচড়ে অর্ধশতক হাকানো, শতরান উপহার দেয়ার রেকর্ডও তার প্রচুর। সন্দেহাতীতভাবেই বাংলাদেশের ওপেনারদের মধ্যে সবচেয়ে ম্যাচ জেতানোর রেকর্ড তামিম ইকবালের।

তবে ধীরে ধীরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ওপর উৎসাহ কমিয়ে ফেলেন দেশের এক নম্বর ওপেনার।
আর তাই গত বছরের শুরু থেকেই টি-টোয়েন্টিতে অনিয়মিত হয়ে ওঠেন তিনি। প্রথমে একটি-দুটি বিচ্ছিন্ন সিরিজে অংশ নেননি। এক পর্যায়ে ছয় মাসের জন্য টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে সাময়িকভাবে ছুটি নেন। অবশেষে টি-টোয়েন্টি থেকে আনুষ্ঠানিক অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেই তামিম ইকবাল।

যেহেতু তিনি আর এই ফরম্যাটে নেই, তাই তাকে নিয়ে কথা-বার্তাও নেই; কিন্তু কঠিন সত্য হলো না খেললে আর দলে না থাকলেই তামিম হারিয়ে যাননি। তাকে নিয়ে কথা-বার্তাও ফুরিয়ে যায়নি। নেদারল্যন্ডসের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে ঘুরেফিরে উঠে আসছে তামিম প্রসঙ্গ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তামিমের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড খুবই দারুণ। এই ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশে ডাচদের বিপক্ষে ৩ বার মুখোমুখি হয়েছে, প্রতিবারই তামিম রান পেয়েছেন। তার ব্যাট থেকে ফিফটি বেরিয়ে এসেছে সব ম্যাচেই। সেটাই শেষ কথা নয়। ডাচদের বিপক্ষে টাইগারদের দুটি জয়ের নায়ক ও রূপকারই তামিম।

প্রথম জয়টি নেদারল্যান্ডসের মাটিতে ২০১২ সালের ২৫ জুলাই। ডাচদের ১৪৪ রানে আটকে ৮ উইকেটে জয়ী হয় বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল খেলেন ৫৩ বলে ৬৯ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। মুশফিকুর রহিম উপহার দেন ২৪ বলে ৩৭ রানের আর একটি হার না মানা ইনিংস।

এরপরের দিন মানে ২০১২ সালের ২৬ জুলাই নেদারল্যান্ডসের কাছে ১ উইকেটে হার মানে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ৪৬ বলে ৫০ আর মুশফিকুর রহিম ৩১ বলে ৪১ রানের দুটি ভাল ইনিংস খেললেও বাংলাদেশ আটকে যায় ১২৮ রানে। ডাচরা সে রান টপকে ১ উইকেটের জয় তুলে নেয় শেষ বলে। এরপর ২০১৬ সালের ৯ মার্চ ভারতের ধর্মশালায় বাছাই পর্বে নেদাল্যান্ডসকে ৮ রানে হারায় বাংলাদেশ।

তামিম ইকবালের ৫৮ বলে ৮৩ রানের হার না মানা ইনিংসের ওপর ভর করে বাংলাদেশ পায় ১৫৩ রানের (৭ উইকেটে) মাঝারি পুঁজি। সাকিব আল হাসান (২/২৯) আর পেসার আল আমিন হোসেনের (২/২৪) মাপা বোলিংয়ে ৮ রানের স্বস্তির জয় পায় বাংলাদেশ। তারপর আর নেদারল্যান্ডসের সাথে দেখা হয়নি বাংলাদেশের।
পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তামিমই সবচেয়ে বড় নির্ভরতা ছিল বাংলাদেশের। ডাচ বোলিংয়ের বিপক্ষে তামিমের ব্যাটই সবচেয়ে আস্থার প্রতীক।

এখন ২৪ অক্টোবর, সোমবার হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে নেদারল্যারন্ডসের বিপক্ষে তাই তামিমকে মনে হবে সবচেয়ে বেশি। ওপরের দিকে তার মত একজন ম্যাচ উইনারের বড্ড অভাব। শেষ দিকে স্ট্রাইকরেট একটু কমে গেলেও ক্যারিয়ারের শুরু থেকে বেশ কয়েক বছর তামিমের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই ছিল টিম বাংলাদেশের বড় সম্পদ ও কার্যকর শক্তি।

তামিম শুরুতে প্রতিপক্ষ বোলিংকে স্বচ্ছন্দে মোকাবিলা করে উইকেটের চারদিকে বাহারি স্ট্রোক প্লে‘তে শুধু রানের চাকা সচলই রাখতেন না, প্রতিপক্ষ বোলিংকেও করে দিতেন এলোমেলো। আর নিজ দলের পরের দিককার ব্যাটাররা পেতেন বাড়তি সাহস ও আস্থা। তাতে করে পুরো ব্যাটিংটাই হতো সমৃদ্ধ।

এখন সেই কাজটি ভালো হচ্ছে না। স্ট্রাইকরেট নিয়ে নয়, ওপেনিং জুটিই কঠিন সংকটে। ওপরের দিকে এককজন ব্যাটার আস্থা নিয়ে খেলে দলকে প্রাথমিক ভিত গড়ে দিতে পারছেন না। শেষ দিকে তামিম একদিক আগলে স্কোর লাইন মোটা তাজা করার কাজটিও করেছেন বেশ আস্থা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে।

এখন সে ভূমিকাটিও কেউ নিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে ওপরের দিকে কঠিন সংকটে বাংলাদেশের ব্যাটিং। একজন তামিম ইকবালের অভাব পরিষ্কার। তার স্ট্রাইকরেট নিয়ে যারা অযথা হইচই করেছেন, তারা এখন চুপ মেরে গেছেন। আসলে দলে একজন তামিমের খুব অভাব।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচেই শুধু নয়, এবারের বিশ্বকাপেও তামিমের মত ওপেনারকে মিস করবে বাংলাদেশ। ওপেন করুন কিংবা তিন নম্বরে খেলুন, একমাত্র লিটন দাসই তামিমের অভাব পূরন করতে পারেন। লিটন নিজের ব্যাটিং প্রতিভা ও মেধা, স্কিল কাজে লাগিয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারলেই তামিমের শূন্যতা পূরণ হবে। অন্যথায় নয়।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G